পাবনার চাটমোহর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমানের অপসারণ দাবিতে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী গতকাল বুধবার সকালে কালো ব্যাজ ধারণ করে। পরে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে মৌন মিছিল করে তারা উপজেলা পরিষদ চত্বরে এসে অবস্থান নেন। এরআগে ২৩ জুন শিক্ষক-কর্মচারী অধ্যক্ষ কর্তৃক কলেজ সরকারিকরণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষকদের পদ সৃজন করে বৈধ শিক্ষকদের বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ও অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারী প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছেন। এদিকে নিরাপত্তার কারণে অধ্যক্ষ পুলিশ পাহারায় কলেজ করছেন।
বুধবার সকালে কলেজের সিনিয়র শিক্ষক ও বিভাগীয় প্রধান লিলি আকতার,কামাল মোস্তফা,বিকাশ মৈত্র,আবুল কালাম আনসারী,রেহানা খাতুন,আঃ সালাম,কর্মচারী আঃ রহমানের নেতৃত্বে কালো ব্যাজ ধারণ শেষে মৌন মিছিল বের হয়। উপজেলা পরিষদ চত্বরে এসে তারা অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি সরকার অসীম কুমারের সাথে সাক্ষাত করে প্রতিকার দাবি করেন।
শিক্ষক-কর্মচারীরা অভিযোগ করেন,কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের পদ সৃজনের ফাইল গত ০৭.০৫.১৯ ইং তারিখে মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকশিক্ষা অধিদপ্তরে শেষ দিন হলেও আজ পর্যন্ত তা পৌঁছানো হয়নি। অধ্যক্ষ কলেজ সরকারিকরণের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। শিক্ষকরা আরো অভিযোগ করেন,অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমানের কাম্য যোগ্যতার ঘাটতি থাকায় পদ সৃজনে নিজেই বাদ পড়বেন। নিয়োগ নিষেধাজ্ঞার পরে গভর্নিং বডিকে না জানিয়ে রেজুলেশন টেম্পারিং করে,কাটাকাটি করে জনবল কাঠামোর অতিরিক্ত ২২ জন শিক্ষককে মোটা টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন। এজন্য বৈধ শিক্ষকদের বাদ দেওয়ার অপচেষ্টা করছেন।
এদিকে শিক্ষকদের আত্তীকরণ নিয়ে চলছে রশি টানাটানি। এনিয়ে কলেজের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং কলেজের অধ্যক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করছেন। কলেজের ১৩৮ জন শিক্ষকের আত্তীকরণের ফাইল ২১ মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরকার অসীম কুমার চাটমোহর থানার নিরাপত্তা হেফাজতে পাঠিয়েছেন। অপরদিকে এই জটিলতা নিরসনে কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমান ২০ মে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার অসীম কুমার বলেন,‘ফাইলগুলো একাধিকবার কলেজের অধ্যক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেনেনি। একপর্যায়ে ডিসি স্যারের সাথে কথা বলে ১৩৮টি ফাইল নিরাপত্তা হেফাজতে চাটমোহর থানায় পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন,জটিলতা নিরসন ও অধ্যক্ষের দূর্নীতির বিষয় তদন্ত করতে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার মহোদয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহীর পরিচালককে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠণ করেছেন। জেলা প্রশাসক মহোদয়ও তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও দপ্তরে পাঠিয়েছেন। ইউএনও বলেন,হাইকোর্টের রিটের কোন কপি আমি পাইনি।’
এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমান বলেন,৫ই মের মধ্যে ফাইল পাঠানোর কথা। আমি ডিজিতে একাধিকবার সময় চেয়ে আবেদন করি। ইউএনও একবারও করেননি। আমি ইউএনওকে সমস্ত ফাইল দিয়েছি। এরমধ্যে কলেজের কতিপয় শিক্ষককে দিয়ে তিনি ডিসি সাহেবের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত কমিটি হয়েছে। একটি চিঠি পেয়েছি কেবল। কোন তদন্ত হয়নি।’তিনি বলেন,আমি সময় চলে যাবার পর ডিজি স্যারের সাথে কথা বলেছি। এখন বিশেষ আবেদন করতে হবে। সে কারণে আইনগতভাবে সমাধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছি। এখন সময় লাগবে।’ আদালত সমস্ত তদন্ত ও অভিযোগের বিষয়ে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।
প্রসঙ্গতঃ সদ্য জাতীয়করণকৃত চাটমোহর সরকারি কলেজের শিক্ষকদের আত্মীকরণের ফাইল সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে কিছুদিন ধরেই। শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক দূর্নীতি ও ভুয়া শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করেই মুলতঃ এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এ অবস্থায় অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমান ও তাঁর অনুসারীদের কর্তৃক কলেজের শিক্ষকদের প্রাণনাশের হুমকি ও চাকুরিগত হুমকি প্রদান করার অভিযোগ এনে কলেজের ৪১ জন শিক্ষক গত ১৪ মে চাটমোহর থানায় অধ্যক্ষসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি জিডি করেছেন। জিডি নং ৫১১,তাং ১৪/৫/১৯। অপরদিকে কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মিজানুর রহমানসহ অপর ৪১জন শিক্ষক গত ১৫ মে তার প্রতিপক্ষ ৪১জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে পাল্টা আরেকটি জিডি করেছেন। যার নং ৫৪৩,তাং ১৫/৫/১৯ ইং।