ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন উপজেলার এমপি ডাঙ্গীতে চলছে ৬৬ কোটি ৪২ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩২ টাকা ব্যায়ে দেড় কিলো মিটার এলাকা জুড়ে পদ্মা নদীর ডান তীর সংরক্ষন বাঁধ নির্মান কাজ। নির্মান কাজে দ্রুত গতিতে হওয়ায় খুশি পদ্মা নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষ। আর পদ্মা নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের গুনগত মান, পরিমান, পরিক্ষণ ও যাচাইয়ের জন্য নিয়মিত কাজ তদারকি করছেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের টাস্কফোর্স এর সদস্যগণ।
ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন উপজেলায় গত কয়েক বছর ধরে পদ্মা নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে পদ্মা নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টোর ফসলী জমি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা ও কয়েক হাজার বসত বাড়ি ও পাকা সড়ক। গত কয়েক বছরে চরভদ্রাসন উপজেলার তিনটি স্থান চরহোসেনপুর, চরহাজীগঞ্জ বাজার ও এমপি ডাঙ্গী এলাকায় সবচেয়ে বেশী মানুষ নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড পদ্মা নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা ও জনগনের কথা ভেবে সরকারি প্রকল্প গ্রহণ করে। এর ধারাবাহিকতায় গত ৭ আগস্ট ২০১৮ সালে একনেক সভায় ২৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প পাশ হয়। প্রকল্পের আওতায় ৩.৪ কিলো মিটার নদী তীর সংরক্ষণ কাজ এবং ১০ কি. মিটার নদী ড্রেজিং কাজ অন্তভুক্ত করা হয়। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে এমপি ডাঙ্গী এলাকার দেড় কিলো মিটার নদী তীর সংরক্ষণ কাজ চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারী থেকে শুরু হয়। তার পরে থেকেই এমপি ডাঙ্গী গ্রামের ভাঙ্গনমুখী পদ্মা নদীর ডান তীর সংরক্ষন বাঁধ নির্মান প্রকল্পের আওতায় জিও ব্যাগ প্লেসিং কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ফলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে উপজেলা সদরে এমপি ডাঙ্গী গ্রাম ও পাকা সড়কসহ সব ধরনের অবকাঠামো পদ্মা ভাঙন থেকে রক্ষাপাবে। কাজের গুনগত মান ঠিক থাকায় খুশি ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষ।
ভাঙ্গন কবলিত এলাকার কাজ সম্পর্কে স্থানীয় বাসিন্দা আবদুস সবুর কাজল বলেন, গত বর্ষা মৌসুমে চরভদ্রাসন উপজেলার ৫টি পয়েন্টে পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাকা সড়ক ও মসজিদ-মাদ্রাসাসহ কয়েক হাজার বসত বাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। চলতি অর্থ বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড এমপি ডাঙ্গীর দেড় কিলো মিটার এলাকা জুড়ে কাজ করছে। দ্রুত গতিতে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। কাজের গুনগতমানও ভাল। তবে অন্য সব ভাঙ্গন কবলিত এলাকায়ও নদী ভাঙ্গন রোধে কাজ করতে হবে।
ফরিদপুর পানি উন্নয় বোর্ড সূত্র জানায়, পদ্মা নদীর পাড় থেকে নদীর ঢালে ১০০ মিটার পর্যন্ত পানির অংশ জুড়ে জিও ব্যাগ প্লেসিং ও বোল্ডার ডাম্পিং কার্যক্রমের জন্য ৬৬ কোটি ৪২ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩২ টাকা ব্যয়ে দেড় কিলো মিটার নদীর ডান তীর স্থায়ী বাঁধের কাজ শেষ হবে ২০২০ সালে ৩০ জনে।
এমপি ডাঙ্গী গিয়ে দেখাযায় নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে বাঁধ নির্মানে শত শত শ্রমিক কাজ করছে। কেই বালু কেটে জিও ব্যাগে ভরছে, কেউ ব্যাগ শেলাই করছে। কেই ওজন ঠিক করছেন। আর এই কাজের তদারকি করছেন ফরিদপুর পানি উন্নয় বোর্ডের কর্মকর্তাগণ। এছাড়াও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের টাস্কফোর্স এর সদস্য রাও নিয়মিত কাজের গুনগত মান ঠিকরাখতে তদারকি করছেন।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের টাস্কফোর্স এর সদস্য শাহ্ মুমিনুল ইসলাম মুমিন জানান, নিয়ম অনুযায়ী ভাবে কাজ হচ্ছে। এখানে কোন অনিয়ম হচ্ছেনা। আমার দায়িত্ব হচ্ছে প্রতিটি নৌকায় ৮৪টি জিও ব্যাগ থাকবে। আমি গুনে দেখি ৮৪টি জিও ব্যাগ আছে কি-না। আর প্রতিটি ব্যাগে ২৮০ কেজি বালু থাকবে। জিও ব্যাগে ২৮০ কেজির কম থাকলে, আমি পুনরায় বালু দিয়ে পুরণ করে দেই। এখানে ফাঁকি দিয়ে কাজ করা যাবেনা।
ফরিদপুর পানিউন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, ফরদপুর জেলা চরভদ্রাসন পদ্মা নদীর ডান তীরে তিনটি স্থান চরহোসেনপুর, চরহাজীগঞ্জ বাজার ও এমপি ডাঙ্গী এলাকায় বিগত কয়েক বছর ধরে প্রবল নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জনগনের চাহিদা ও বাস্তবতার নিরিখে সরকারি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর ধারাবাহিকতায় গত ৭ আগস্ট ২০১৮ সালে একনেক সভায় ২৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৩.৪কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ কাজ এবং ১০কি. মিটার নদী ড্রেজিং কাজ অন্তভুক্ত রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে আমরা এমপি ডাঙ্গী এলাকায় দেড় কিলো মিটার নদী তীর সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়ন শুরু করেছি। এবং উজানের চরহোসেনপুর ও চরহাজীগঞ্জ বাজারে কার্যক্রম শুরু করেছি ইতিমধ্যে। আর এমপি ডাঙ্গীর ভাটিতে ও অন্যান্য এলাকাও ইদানীং ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। আমরা যখন প্রকল্প প্রনয়ন করি তখন বালিয়া ডাঙ্গিতে কোন ভাঙ্গণ ছিল না এবং প্রকল্প গ্রহনের আওতায় ধরাও হয়নি। আমরা আশা করি এমপি ডাঙ্গীর কাজ বাস্তবায়ন শেষে, পর্যায় ক্রমে বালিয়া ডাঙ্গীতেও ভাঙ্গণ রোধ করা হবে। এবং স্থায়ী বাঁধ নির্মানের মাধ্যমে পুরো চরভদ্রাসন এলাকাকে সুরক্ষিত করা সম্ভব হবে। আমি সবসময় কাজের গুনগত মান যাচাই করছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যাতে কোন রকম ফাঁকি দিতে না পারে সে জন্য সবসময়ের জন্য আমার প্রতিনিধি, স্থানীয় জনগন ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের টাস্কফোর্স এর সদস্যগণ সবসময় খেয়াল রাখছে।