একটু সুখ ও একটু স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপনের লক্ষে অবসরে কাদা-মাটি দিয়ে নয়নভিরাম কারুকাজ খঁচিত তৈজসপত্র তৈরী করছে ওরা কয়েকজন। এরা কেউ জাত মৃত শিল্পী নয়, পূর্বের কোন অভিজ্ঞতার নেই ওদের, তারপরও যে কারো দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম ওদের তৈরীকৃত মাটির এ বাহারী শিল্পকর্ম। ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের বেজপাড়া নামক গ্রামের ছোট একটি দোকানের পেছনে চাটাইয়ের বেড়া ঘেরা একটি কক্ষে নান্দনিক তৈজসপত্র তৈরীতে দিন রাত পরিশ্রম করে চলেছে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি তাইজেল, তাপস, বালু শ্রমিক সিরাজুল, আনোয়ার, বাশার, মামুন, মিঠুসহ আরো কয়েক জন। তিন মাস পরিশ্রম করে ২শতাধীক আইটেমের প্রায় ২ শহ¯্রাধীক মাটির সোপিচ তৈরী করেছেন। বিক্রির উদ্দেশ্যে প্যাকেটজাত করা হয়েছে ওগুলো। কিন্তু এগুলো কোথায় বিক্রি করা যায় তা না জানায় বিপাকে পড়েছেন তারা।
কালীগঞ্জ উপজেলার বেজপাড়া গ্রামের ইলেকট্রেশিয়ান তাইজেল জানান, তাদের বন্ধু মহলের মধ্যে সে ও তাপস ইলেট্রিকাল কাজ করেন। অন্য বন্ধুরা বালু শ্রমিক। বেলা ১২টার মধ্যে তাদের কাজ শেষ হয়ে যায়। এ কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলেনা। তাই বাড়তি আয়ের আশায় অবসরে তারা কাদা-মাটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সৌন্দর্য বর্ধক তৈজসপত্র তৈরী করা শুরু করেন এ বছরের শুরু থেকে। তাইজেল জানান অন্য কিছু করতে পুঁজি প্রয়োজন কিন্তু মাটির কাজে পুঁজি লাগেনা, লাগে শ্রম ও ধৈর্য। ইলেকট্রিকের কাজ করতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ হয় আমার । অনেকের বাড়িতে মাটির তৈরী তৈজসপত্র সাজিয়ে রাখা দেখে বাড়তি আয়ের জন্য বিনা পূঁজিতে এ কাজ করার ধারণা জন্মে। একদিন বন্ধুদের ডেকে এ ব্যাপারে আলোচনা করলাম। সাড়া পেলাম সবার। সেই দিন থেকেই শুরু করে আজ অবধি অবসর কাটছে কাদা-মাটি নিয়ে।
তাপস-তাইজেলদের চাটাইয়ে ঘেরা কক্ষটিতে একটি ডায়াস মেশিন আছে। নিজস্ব প্রযুক্তি দিয়ে ওরা মেশিনটি তৈরী করেছে। মেশিনটির এক অংশ ঘুর্ণায়মান পাঠাতন হিসেবে কাজ করে। অন্য অংশ মাটিকে বিভিন্ন আকারে রুপ দিতে ডায়াস হিসেবে কাজ করে। যন্ত্রটিকে হাতে ঘুরানো যায়। একজন হাতলটি ঘুরান। অন্যজন পাঠাতনে রাখা কাদা-মাটির বিভিন্ন রুপ দেন। এভাবে তৈরী মাটির-জিনিষগুলো রোদে শুকানো হয়। পরে ছোট একটি পাজাতে তা পোড়ানো হয়। এরপর বিভিন্ন রঙে রাঙান হয় ওগুলো। এভাবেই তৈরী হচ্ছে তাইজেলদের বাহারী রঙের মাটির তৈজসপত্র। তাপস জানান, তিন মাস পরিশ্রম করে ২শতাধীক আইটেমের প্রায় ২ শহ¯্রাধীক মাটির তৈজসপত্র তৈরী করেছেন তারা। বিক্রির উদ্দেশ্যে ওগুলো প্যাকেটজাত করা হয়েছে । কিন্তু এগুলো কোথায় বিক্রি করা যায় তা না জানায় বিপাকে পড়েছেন তারা। তবে তাদের আশা ঢাকাতে কয়েকটি স্থানে যোগাযোগ করা হচ্ছে। খুব দ্রুতই হয়তো মালগুলো বিক্রি করতে পারবেন।