একুশে পদক জয়ী পলান সরকারের দোয়া মাহফিল ও স্বরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় বাউসা হারুন-অর-রশিদ দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এ দোয়া মাহফিল ও স্বরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বাউসা হারুন-অর-রশিদ দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ দোয়া মাহফিল ও স্বরণ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাবা বারিন্দ্র মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ও বিশিষ্ট সমাজ সেবক সামসুদ্দিন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা।
জানা যায়, পলান সরকারের বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের বাউশা পূর্বপাড়া গ্রাামে। নিজের টাকায় বই কিনে পাঠকের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতেন পলান সরকার। বই পড়ার এমন আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য তাকে ২০১১ সালে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোতে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন ছাপা হয়। তাকে নিয়ে ‘সায়াহ্নে সূর্যোদয়’ নামে একটি নাটক তৈরি হয়েছে।
পলান সরকারের আসল নাম হারেজ উদ্দিন। তবে দেশব্যাপী তিনি পলান নামেই পরিচিতি পেয়েছেন। ১৯২১ সালে জন্ম নেয়া এই বই পাগল গুণী ব্যক্তিটি প্রথমদিকে স্থানীয় একটি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিলি শুরু করেন।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেধা তালিকায় ১ থেকে ১০ ক্রমিক নম্বরদের তিনি একটি করে বই উপহার দিতেন। তবে এর কিছুদিন পর থেকে সবাইকেই বই দেয়া শুরু করেন। এভাবে পায়ে হেঁটে একটানা ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে বই বিলি করেছেন পলান সরকার। তাঁর ৬ ছেলে তিন মেয়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে বড় ছেলে মোজাফফর হোসেন বাউসা মহাবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, দ্বিতীয় ছেলে আবিবুর রহমান বাউসা মহাবিদ্যালয়ের কর্মচারী, তৃতীয় ছেলে আবদুল হানিফ খোর্দ্দ বাউসা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক, চতুর্থ ছেলে আবদুল হাকিম ভূষিমাল ব্যাবসায়ী, ৫ম ছেলে হায়দার আলী খাগড়বাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক, ৬ষ্ট ছেলে আবদুর রশিদ রবি মোবাইল ফোন কম্পানির প্রকৌশলী। বড় মেয়ে রাবেয়া খাতুন, দ্বিতীয় মেয়ে রাজিয়া খাতুন, তৃতীয় মেয়ে রোকিয়া খাতুন অন্যাত্রে বিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু রাবেয়া ও রাজিয়ার স্বামী ইতোমধ্যে মারা গেছে। তারা ছেলে সন্তার নিয়ে বসবাস করছে। তবে ছোট মেয়ে রোকিয়া খাতুন এমএ পাশ করে স্বামীর সংসার করছে। মেয়ের নিজ এলাকায় বিয়ে দেয়া হয়।
বাউসা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান শফিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক অধ্যাপক আবুল কালাম মোহাম্মদ আজাদ, রাজশাহী জেলা পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ নুর মোহাম্মদ তুফান, বাউসা হারুন-অর-রশিদ দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল মজিদ, অবসরপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষক আবু দাউদ, অধ্যক্ষ রেজাউল করিম, পলান সরকারের ছেলে মোজাফফর হোসেন দুলু, হায়দার আলী, সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফ আলী মলিন, শিক্ষার্থী জারীন প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মাহবুব হাসান টুটন।
উল্লেখ্য, গ্রামের পথে ঘুরে ঘুরে আর বই বিলি করবেন না পলান সরকার। তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর নিজ বাড়িতে ৯৮ বছর বয়সে ১ মার্চ মারা যান।